ইসলাম ধর্মের প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠী এসব কোরআনের অনুলিপি তৈরি করে নিজেদের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি, সংস্কৃতি, পছন্দ আর নান্দনিক প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে গেছেন।
Published : 10 Apr 2025, 09:24 PM
মুসলমানদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ কোরআনের ৪০০ দুর্লভ কপি সংগ্রহে রেখেছে সৌদি আরবের কিং আব্দুলআজিজ পাবলিক লাইব্রেরি, যেগুলো হিজরি দশম থেকে তের শতকের।
সৌদি গেজেট লিখেছে, গ্রন্থাগারটির এমন সংগ্রহ একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার, যা বিভিন্ন আরব ও ইসলামী যুগের ক্যালিগ্রাফি, খোদাই, নকশা, হস্তলিপি ও সৃজনশীলতার উজ্জ্বল স্বাক্ষর বহন করছে।
এসব কোরআনের একটিতে আয়াতুল কুরসি, বিভিন্ন অলঙ্করণ আর সাজসজ্জা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। দুইপাশের কভার পৃষ্ঠায় সোনার আবরণে রয়েছে গাছপাতা বা উদ্ভিদের সাজসজ্জা। সোনার ফ্রেমের ভেতরে লেখা হয়েছে আয়াত। হিজরি ১২৮৪ সনে এটি মুদ্রণ করেছিলেন পারস্যের দার্শনিক ও সুফি ফখর আল-দীন আল-সোহরাওয়ার্দী।
আরেকটি কপিতে রয়েছে ৩০টি পাতা। সেটির প্রথম পৃষ্ঠা সোনার পানিতে গাছের পাতার চমৎকার অলঙ্করণে আঁকা হয়েছে। বাকি পৃষ্ঠাও সম্পূর্ণ সোনার আবরণে সাজানো। সাইড ফ্রেমেও সোনার আবরণে গাছপাতার নকশা করা হয়েছে। হিজরি ১২৪০ সনে নাসখ লিপিতে এই অনুলিপি তৈরি করা হয়।
গ্রন্থাগারটিতে হিজরি ১০২৫ সনের কোরআনের আরেকটি কপি রয়েছে। কালো কালিতে লেখা আরবি হরফের উপড়ে-নিচে লাল-নীল রঙের নোকতা ব্যবহার করা হয়েছে। দার্শনিক মুল্লা আলী আল-ক্বারী মক্কায় রোজার মাসে এই অনুলিপি তৈরি করেছিলেন।
এ ছাড়া আরেকটি সম্পূর্ণ কোরআন লেখা রয়েছে কালো কালিতে। নোকতায় ব্যবহার হয়েছে সোনালি রঙ। সুরার শুরুতে গাছপাতা ও জ্যামিতিক নান্দনিক নকশা করা হয়েছে। হিজরি ৯২০ সনে তৈরি এ অনুলিপি বাঁধাই করা হয়েছে চামড়ায়।
কালো কালিতে লেখা সম্পূর্ণ আরেকটি কোরআন রয়েছে, যার হরফের উপর-নিচে সোনালি, সবুজ, লাল ও নীল নোকতা হয়েছে। গাছপাতার নকশা বা মোটিফ আঁকা হয়েছে সোনার পানিতে। এটি কোরআনের সবচেয়ে রাজকীয় অনুলিপির একটি ধরা হয়ে থাকে। দীর্ঘ সময় ধরে অত্যন্ত যত্ন সহকারে ফুল-পাতার সোনালি নকশায় ইসলামী শৈল্পিক সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এটি মোড়ানো হয়েছে মোমের প্রলেপে।
গ্রন্থগুলোতে অলঙ্কারিক ভূমিকা ও উপসংহার লেখা হয়েছে। বর্গাকারে লেখা প্রাচীন আন্দালুসীয় ও মরক্কোর কোরআনও রয়েছে। বিভিন্ন গাছপাতার সজ্জা দিয়ে লেখা কোরআনের ভারতীয় অনুলিপিও রয়েছে। চীনা, কাশ্মীরি ও মামলুক জাতিগোষ্ঠীর সময়ের কোরআনও রয়েছে।
কুফিক লিপি থেকে শুরু করে সেগুলো লেখা হয়েছে নাসখ, থুলুথ, টিম্বুকতু ও সবশেষ সুদানিজ লিপিতেও। সেইসঙ্গে লেভান্ত, ইরাক, মিশর, ইয়েমেনের পাশাপাশি আরবের নজদি ও হিজাজি জাতিগোষ্ঠীর লিপির কোরআনও রয়েছে, যা মূলত ইসলামিক চিত্রকলার সমৃদ্ধ ইতিহাস তুলে ধরছে।
গ্রন্থাগারটিতে কোরআনের অনুলিপিগুলোকে মুদ্রণের লিপি, কোন অঞ্চলে কখন লেখা ও এর সাজসজ্জা অনুযায়ী ভাগ করা হয়েছে। ইসলাম ধর্মের প্রত্যেক জাতিগোষ্ঠীই এসব কোরআনের অনুলিপি তৈরি করে নিজেদের শৈল্পিক দৃষ্টিভঙ্গি, সংস্কৃতি, পছন্দ, সাজসজ্জা আর নান্দনিক প্রতিভার চিহ্ন রেখে গেছেন।