Published : 01 May 2025, 11:35 PM
‘বিশ্বস্ত গোয়েন্দা তথ্যের’ বরাতে পাকিস্তান গত বুধবার বলেছে, আগামী পাঁচ দিনের মধ্যে ভারত তাদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে যেতে পারে।
অন্যদিকে ভারতে গত মঙ্গলবার ও বুধবার বেশ কয়েকটি নিরাপত্তা বিষয়ক বৈঠকে নেতৃত্ব দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
কাশ্মীরের পেহেলগামে পর্যটকদের ওপর হামলায় ২৬ জনের মৃত্যুর পর দুই দেশের এসব ঘটনাক্রমই মূলত ভারতের সামরিক অভিযানের গুঞ্জনকে জোরালো করেছে।
গত ২২ এপ্রিলের ওই হামলার পর দক্ষিণ এশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্রধারী দুই প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সম্পর্কে আরও অবনতি ঘটে। উভয় দেশ কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করে ফেলে; একে অপরের নাগরিকদের ‘বিতাড়িত’ করাসহ দ্বিপক্ষীয় নানা চুক্তিও স্থগিত হয়ে যায়।
আল-জাজিরার বিশ্লেষণ বলছে, সবকিছু মিলিয়ে এ উপমহাদেশ একটা ঝুঁকির মধ্যে পড়ে গেছে। সঙ্গে এ প্রশ্নও উঠেছে, ভারতের ‘আসন্ন’ সামরিক জবাব কেমন হতে পারে; এ নিয়ে ইতিহাসই বা কী বলছে?
গোপন অভিযান
এ ধরনের অভিযান ঘোষণা করা হয় না; নিশ্চিতও হওয়া যায় না। কিন্তু কয়েক দশক ধরে ভারত ও পাকিস্তান একে অপরের নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে একাধিক গোপন অভিযান চালিয়েছে।
এসব অভিযানের লক্ষ্য থাকে সামরিক চৌকি, সেনা হত্যা এবং কখনো কখনো শত্রুপক্ষের সেনাদের শিরশ্ছেদ করা।
প্রায় ক্ষেত্রেই দেখা যায়, আক্রমণের শিকার হওয়া কোনো সামরিক ইউনিট প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসেবে এ ধরনের হামলা চালিয়েছে।
কিন্তু এসব অভিযান কখনোই আনুষ্ঠানিকভাবে নিশ্চিত করা হয় না। গোপন রাখার উদ্দেশ্য হলো, প্রতিপক্ষ যেন একটা বার্তা পায়, কিন্তু পাল্টা পদক্ষেপের সুযোগ না পায়। এতে উত্তেজনা বেড়ে যাওয়ার ঝুঁকিও কম থাকে। আর ঘোষণা দিয়ে হামলা হলে প্রতিপক্ষ দেশে পাল্টা জবাব দেওয়ার একটা চাপও তৈরি হয়।
প্রকাশ্য ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রতিপক্ষকে ‘বিব্রত’ করতে এ ধরনের হামলা চালানো হয়। এ ধরনের হামলায় রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিও থাকে না।
ভারত এর আগেও নিয়ন্ত্রণ রেখা পার হয়ে 'সার্জিক্যাল স্ট্রাইক' চালিয়েছে। তাদের সর্বশেষ হামলাটি হয় ২০১৬ সালে।
ওই বছর উরিতে সশস্ত্র যোদ্ধাদের হামলায় ১৭ ভারতীয় সেনা নিহত হওয়ার পর সীমান্ত পার হয়ে ‘লঞ্চ প্যাড’ নামে ওই হামলা চালায় নয়া দিল্লি।
ওই সময় নয়া দিল্লি অভিযোগ করে, হামলাকারীরা নতুন করে আক্রমণের ছক কষছিল।
অভিযানের পর ভারতের তৎকালীন সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর-জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল রণবীর সিং এক বিবৃতিতে বলেছিলেন, “হামলাকারীরা যেন ভারতীয় নাগরিকদের ক্ষতি করার সুযোগ না পায়, সে জন্য এ হামলা চালানো হয়েছে।”
ওই হামলায় কয়েক ডজন হামলাকারী নিহত হওয়ার দাবি জানায় নয়া দিল্লি, যদিও অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, নিহতের সংখ্যা ছিল এর চেয়ে অনেক কম।
বিমান হামলা
২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে দেশটির ৪০ আধা-সামরিক সেনাকে হত্যা করেন এক আত্মঘাতী বোমা হামলাকারী।
ভারতের জাতীয় নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ আগে ওই হামলা হয়। হামলার দায় স্বীকার করে নেয় পাকিস্তানভিত্তিক সশস্ত্র গোষ্ঠী জয়শ-ই-মুহাম্মদ।
ওই সময় তীব্র ক্ষোভের মধ্যে পড়ে পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায় ভারতীয় বিমান বাহিনী।
হামলার পর নয়া দিল্লি দাবি করে, তারা ‘সন্ত্রাসীদের’ আস্তানায় আঘাত হেনেছে এবং কয়েক ডজন ব্যক্তিকে হত্যা করেছে।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে বলা হয়, ভারতের যুদ্ধবিমান একটা বনাঞ্চলে আঘাত হেনেছে এবং এতে কারো মৃত্যু হয়নি।
ইসলামাবাদ দাবি করে, তাদের যুদ্ধবিমান ভারতের বিমানকে ধাওয়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণ রেখায় ফিরে যেতে বাধ্য করে।
এ ঘটনার একদিন পর ভারত ও পাকিস্তানের যুদ্ধবিমান ফের সংঘর্ষে লিপ্ত হয়, যার সমাপ্তি ঘটে পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূখণ্ডে ভারতীয় একটি বিমান ভূপাতিত হওয়ার মধ্য দিয়ে। ওই সময় ভারতীয় এক পাইলট আটক হন এবং কয়েক দিন পর দেশে ফেরেন।
পাকিস্তান নিয়ন্ত্রিত ভূমি দখলের চেষ্টা
পাকিস্তান-শাসিত কাশ্মীর নয়া দিল্লির দখলে নেওয়া উচিত- এমন মনোভাব ভারতে গত কয়েক বছরে জোরালো হয়েছে।
পেহেলগামের সাম্প্রতিক হামলার পর এ মনোভাব আরও তীব্র হয়েছে। বিরোধী দল কংগ্রেসের কয়েকজন নেতাও অঞ্চলটি দখলে নিতে মোদী সরকারকে আহ্বান জানিয়েছেন।
নৌ অভিযান
পেহেলগাম হামলার পর ভারতীয় নৌবাহিনী ঘোষণা দেয়, তারা পরীক্ষামূলকভাবে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
গত ২৭ এপ্রিল নৌবাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়, “যেকোনো সময়, যেকোনো স্থানে, যেকোনো উপায়ে দেশের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষা করতে ভারতীয় নৌবাহিনী প্রস্তুত রয়েছে।”
অনেক বিশ্লেষক মনে করেন, নির্দেশ এলে ভারতীয় নৌবাহিনী যে পাকিস্তানের ভূখণ্ডে আঘাত হানতে সক্ষম, মূলত সে শক্তি জানান দিতেই তারা পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
পুরোদমে সামরিক সংঘর্ষ
স্বাধীনতার ৭৮ বছরে চারবার যুদ্ধে জড়িয়েছে ভারত ও পাকিস্তান। এর মধ্যে তিনটি লড়াই ছিল কাশ্মীর নিয়ে।
১৯৪৭ সালের অগাস্টে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার বিদায়ের দুই মাস পর প্রথমবার কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধে জড়ায় ভারত ও পাকিস্তান।
একটি চুক্তির মধ্য দিয়ে ওই যুদ্ধ শেষ হয় ১৯৪৯ সালের ১ জানুয়ারি। ওই চুক্তির পর থেকেই দুই দেশ অঞ্চলটির আলাদা আলাদা অংশের নিয়ন্ত্রণ নেয়।
আরও পড়ুন
ভারতের হামলা ২৪-৩৬ ঘণ্টার মধ্যে, ইঙ্গিত গোয়েন্দা তথ্যে: পাকিস্তান
এবার পাকিস্তানের জন্য আকাশসীমা বন্ধ করল ভারত
কাশ্মীরে হামলার বদলা নিতে সশস্ত্র বাহিনীকে ‘পূর্ণ স্বাধীনতা’ দিলেন মোদী