Published : 01 May 2025, 04:16 PM
মে দিবসের ইতিহাসের সঙ্গে নারী শ্রমিকেরা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকলেও, তাদের স্বীকৃতি এখনো উপেক্ষিত বলে মন্তব্য করেছেন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী।
আরণ্যক নাট্যদল আয়োজিত মে দিবসের অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, "মে দিবসের ইতিহাস বহুলভাবে চর্চিত ও পঠিত। অথচ এ ইতিহাসের পশ্চাতে ও অভ্যন্তরে আছে আরও অজ্ঞাত ও উপেক্ষিত ইতিহাস। সে ইতিহাস নারীশ্রমিকদের আন্দোলন-সংগ্রামের এবং নারীশ্রম অস্বীকৃতির।"
বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাদদেশে শ্রমিকের বিপ্লবী গান ল'ইন্টারন্যাশনাল গেয়ে শুরু হয় আরণ্যকের মে দিবসের অনুষ্ঠানের প্রথম পর্ব।
পরে বক্তব্য দেন অধ্যাপক রতন সিদ্দিকী। তিনি বলেন, "সামন্ত সমাজে নারী কৃষি শ্রমিকদের মজুরি ছিল পুরুষ কৃষিশ্রমিক অপেক্ষা কম। অথচ কর্মপরিধি বা শ্রমঘণ্টায় নারীরা পিছিয়ে ছিল না।
"রুশ বিপ্লবের পূর্ব পর্যন্ত পুঁজিবাদী সমাজে নারীশ্রম মূল্য নির্দয়ভাবে উপেক্ষিত ছিল। নারীদেরকে মজুরিতে ঠকানোই ছিল প্রথা-রীতি। আর নারীশ্রম শোষণে ধর্ম ও বুর্জোয়া শাসন ব্যবস্থা বরাবরই সহযোগিতা করেছে।"
মে দিবসের ইতিহাস স্মরণ করে রতন সিদ্দিকী বলেন, "১৮৫৭ সালের ৮ মার্চ নিউ ইয়র্ক শহরে বিক্ষোভ করেন সেখানকার পোশাক কারখানা ও সুচ কারখানায় নারী শ্রমিকরা। পুলিশ বিক্ষুদ্ধ নারী শ্রমিকদের ওপর নৃশংস বর্বরোচিত হামলা চালায়। পুলিশের হামলায় বহু নারী শ্রমিক আহত হয়।
"সেই ধারাবাহিকতায় ২৯ বছর পর ১৮৮৬ সালের পহেলা মে আমেরিকায় শ্রমিকরা যে বীরত্বপূর্ণ লড়াই করেছিল, তার পথ ধরে মে দিবসের সাহসী ও দ্রোহী লড়াই হয়েছিল শিকাগো শহরে। আশ্চর্যের বিষয়, নারী শ্রমিকদের সেই সূচনাসংগ্রামের ইতিহাস আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের আলোচনায় একেবারেই উচ্চারিত হয় না। কিংবা মে দিবসের ইতিহাসে তা উপেক্ষিত হয়েই চলেছে।"
রতন সিদ্দিকী বলেন, “সমাজবিধির নামে ও পুরুষতন্ত্রের অন্যায় দাবিতে নারীশ্রম অস্বীকৃতি রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে রূপ নিয়েছে, যা এখনো চলমান।”
১৯৮১ সাল থেকে নিয়মিত মে দিবস পালন করে আসছে আরণ্যক। এই ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় এ বছরও পহেলা মে সকালে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ও সন্ধ্যায় শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে মে দিবসের অনুষ্ঠান সাজিয়েছে নাট্যদলটি।
আরণ্যক নাট্যদলের প্রধান সম্পাদক হারুন রশীদ বলেন, "আমাদের দেশে ১৯৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৯০ এর গণআন্দোলনে শ্রমিকশ্রেণি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। ৬৯ এর গণঅভ্যুত্থান পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসনের আন্দোলনকে বেগবান করলেও শ্রমিকশ্রেণির অধিকার প্রতিষ্ঠায় যে সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল, শেষ অবধি পূরণ হয়নি সে লক্ষ্য।
“আবার ৯০ এ ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণঅভ্যুত্থান সংসদীয় গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার প্রাথমিক ভিত্তি দিলেও গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত ভূমিকা পালন করতে পারেনি। শ্রমিকের অধিকার প্রতিষ্ঠা তো দূরের কথা।"
অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে অভিনীত হয় দুটি পথনাটক। আরণ্যক নাট্যদল মঞ্চস্থ করে পথনাটক 'মাটির মহাজন'। নাটকটি রচনা করেছেন অপু মেহেদী, নির্দেশনা দিয়েছেন হাশিম মাসুদ।
আরণ্যক নাট্যদলের প্রশিক্ষণ সম্পাদক ও নাট্যকার অপু মেহেদী বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, আশির দশকের গোড়ার দিকে আরণ্যক মে দিবসের আয়োজনটি সূচনা করেছে। এর মধ্য দিয়ে মূলত শ্রমজীবী মানুষের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে আমরা সংহতি জানাই। আমরা চাই পৃথিবীর সকল মেহনতি মানুষ তাদের অধিকার যেন পায়।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত দল হিসেবে নাটকের দল ‘থিয়েটার’ মঞ্চস্থ করে পথনাটক ‘অদৃশ্য হাত’। নাটকটি রচনা করেছেন খুরশীদ আলম, নির্দেশনা দিয়েছেন রবিন বসাক।
আরণ্যক জানিয়েছে, মে দিবসের অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্ব শুরু হবে সন্ধ্যা ৭টায় বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার এক্সপেরিমেন্টাল থিয়েটার। সেখানে দর্শনীর বিনিময়ে মঞ্চস্থ হবে আরণ্যকের নাটক 'রাঢ়াঙ'। নাটকটি রচনা ও নির্দেশনা দিয়েছেন মামুনুর রশীদ।
প্রতিবছরই মে দিবসকে সামনে রেখে আরণ্যক ‘মে দিবসের কাগজ’ প্রকাশ করে এবং পথনাটক প্রযোজনা করে। এবারো ‘মে দিবসের কাগজ’ এর নতুন সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে।