তিনি আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তাদের বেশিরভাগকেই বিরূপ করে তুলেছিলেন। অধিকন্তু তার সরকার কেবলমাত্র এর নিজস্ব দেনা মেটাতে প্রচুর পরিমাণে কাগজের টাকা ছাপছিল।
Published : 15 Apr 2025, 04:34 PM
সদ্যপ্রয়াত নোবেলজয়ী পেরুভিয় কথাসাহিত্যিক মারিও বার্গাস যোসা ১৯৯৩ সালে তাঁর আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড প্রকাশ করেছিলেন। পরের বছর সেটি ইংরেজিতে অনূদিত হয়। তাঁর প্রয়াণ উপলক্ষ্যে এখানে তাঁর সেই গ্রন্থের অংশবিশেষ প্রকাশিত হলো। উল্লেখ্য যে আমরা এখানে Granta প্রত্রিকায় প্রকাশিত সংস্করণটিকেই অনুবাদের ভিত্তি হিসেবে গ্রহণ করেছি। বি.স
১৯৮৭ সালের জুলাই মাসের শেষের দিকে, আমি পেরুর উত্তর প্রান্তের মোটামুটি নির্জন একটি সৈকতে ছিলাম, যেখানে বহু বছর আগে, পিউরার এক তরুণ ও তার স্ত্রী, পর্যটকদের ভাড়া দেওয়ার উদ্দেশ্যে কিছু বাংলো বাড়ি বানিয়েছিল। বালিয়াড়ি প্রান্তর, খাড়া পাথুরে পাহাড় ও প্রশান্ত মহাসাগরের ফেনার মতো ঢেউয়ের মাঝে নিষ্পেষিত এই নির্জন গ্রামীণ পুন্তা সাল পেরুর সুন্দরতম একটি স্থান। এটা সময় ও ইতিহাসের বাইরের একটি জায়গা; এখানকার সামুদ্রিক পাখিদের ঝাঁক—গ্যানেট, পেলিকান, গাংচিল, পানকৌড়ি, হাঁস, ও ‘তিজেরেতা’ নামে পরিচিত আলবাট্রস—ভোরের উজ্জ্বল আলো থেকে রক্তিম সূর্যাস্ত পর্যন্ত নিয়ম মেনে শোভাযাত্রা করে।
পেরুর এই দূরবর্তী উপকূলের জেলেরা এখনও প্রাচীন-পূর্ব-হিস্পানিক সময়ের মতোই সাধারণ ভাবে তৈরি সব ভেলায় মাছ ধরে: দুইটি বা তিনটি গাছের গুঁড়ি একসঙ্গে বেঁধে—একটি খুঁটি দিয়ে যা একসাথে বৈঠা ও হাল দুই হিসেবেই কাজ করে। পুন্তা সালে আমি যখন প্রথম ভ্রমণ করি, তখন এই ভেলাগুলোর দৃশ্য আমাকে খুব মুগ্ধ করেছিল; নকশা ও ব্যবহারের দিক থেকে এগুলো দেখতে ঠিক সেই রকম ছিল, যেমনটা Chrnonicles of the Conquest অনুযায়ী, চার শতাব্দী আগে, ফ্র্যান্সিস্কো পিসসারো ও তার সাথীরা, এখান থেকে খুব একটা দূরে নয় এমন এক জায়গায় এই রকমই একটি ভেলা দেখে বিশ্বাস করেছিলেন যে, পানামা থেকে তাদেরকে এই উপকূলে টেনে আনা স্বর্ণ-সাম্রাজ্যের পুরাণকথা আসলে সত্যি ছিল।
জাতীয় ছুটির সপ্তাহে, আমি, পাত্রিসিয়া ও আমার সন্তানদের সাথে পুন্তা সালে ছিলাম। খুব বেশিদিন হয় নি যে লন্ডন থেকে আমরা পেরুতে ফিরে এসেছি, লন্ডন—যেখানে আমরা প্রত্যেক বছর তিন মাস করে সময় কাটাই। আমি ভেবেছিলাম, সমুদ্রে ডুব দেওয়ার ফাঁকে ফাঁকে আমার নতুন বই, El hablador-এর প্রুফ সংশোধন করব এবং সকাল থেকে রাত পর্যন্ত নিঃসঙ্গতার এক বদ অভ্যাস চর্চা করব — যেটি হলো বই পড়া। মার্চ মাসে, আমার একান্ন বছর পূর্ণ হয়েছে। সব লক্ষণ এটাই বলছিল যে, জন্মলগ্ন থেকে অস্থির আমার এই জীবন, তা এখন হয়তো একটু শান্ত হবে: একটা জীবন যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কোনো এক বিশ্ববিদ্যালয়ে মাঝেমধ্যে পড়ানো বাদে শুধুমাত্র লেখালেখিতেই নিবেদিত এবং লিমা ও লন্ডনেই অতিবাহিত হয়।
গত বছর, আমি একটি ‘পাঁচ বছরের পরিকল্পনা’ কল্পনা করেছিলাম যেখানে আমার পঞ্চান্নতম জন্মদিনের আগে আমি কী কী অর্জন করতে চাই তা আমার মেমো বইতে লিখে রেখেছিলাম।
এক. ডন কিহোতের মতো এক ছোটখাটো, বুড়ো মানুষের চরিত্র নিয়ে মঞ্চনাটকের জন্য একটি রচনা লেখা যেখানে এই চরিত্রটি পঞ্চাশ দশকের লিমাতে, শহরের ঔপনিবেশিক যুগের বারান্দাগুলো রক্ষা করার জন্য এক অভিযানে নামেন, কারণ বারান্দাগুলো ভাঙনের হুমকির মুখে ছিল।
দুই. আন্দিজ পর্বতের একটি গ্রামে মনুষ্য বলি ও রাজনৈতিক অপরাধের ওপর ভিত্তি করে কিছুটা গোয়েন্দা কাহিনি ও কিছুটা অলীক কল্পনার আদলে একটি উপন্যাস রচনা করা।
তিন. ভিক্টর হুগোর Les Misérables রচনার প্রক্রিয়া নিয়ে একটি প্রবন্ধ লেখা।
চার. এক উদ্যোক্তাকে নিয়ে একটি নাটক রচনা করা, যিনি লন্ডনের সাভয় হোটেলের একটি স্যুটে অনাকাঙ্খিতভাবে তার স্কুলজীবনের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুর সাক্ষাত পান — যে বন্ধুটিকে তিনি মৃত ভেবেছিলেন এবং যিনি হরমোন ও অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে এখন একজন আকর্ষণীয় নারীতে রূপান্তরিত হয়েছেন।
পাঁচ. উনিশ শতকের শুরুতে বেঁচে থাকা ফরাসি-পেরুভিয় বিপ্লবী, মতাদর্শবিদ, ও নারীবাদী ফ্লোরা ত্রিস্তানকে কেন্দ্র করে একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস রচনা করা।
ওই একই মেমো বইয়ে আমি আরও কিছু প্রকল্পের কথা টুকে রেখেছিলাম যা তুলনামূলকভাবে কম জরুরী যেমন: অতি কঠিন জার্মান ভাষা শেখা, কিছুদিন বার্লিনে বসবাস করা, সেই সব বই আবার পড়ে শেষ করা যেগুলোর কাছে আমি হেরে গিয়েছিলাম। যেমন: Finnegans Wake ও The Death of Virgil; পুকালপা থেকে শুরু করে ব্রাজিলের বেলেম দু পারা পর্যন্ত অ্যামাজন নদী হয়ে ভ্রমণ করা, আমার সব উপন্যাসের একটি সংশোধিত সংস্করণ প্রকাশ করা, এবং ওই তালিকায় ততটা প্রকাশযোগ্য নয় এমন আরোও কিছু অস্পষ্ট পরিকল্পনা ছিল।
২৮ জুলাই, দুপুর বেলায়, আমি আমার এক বন্ধুর ছোট পোর্টেবল রেডিওতে জাতীয় ছুটির দিনে কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতির দেওয়া বার্ষিক ভাষণ শুনতে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। আলান গার্সিয়া তখন দুই বছর ধরে রাষ্ট্রপতির পদে ছিলেন এবং সেময়টাতেও অনেক জনপ্রিয় ছিলেন। কারও কারও কাছে তার রাজনৈতিক আদর্শ এক ধরনের অপরিপক্ব, জনতাবাদী সমাজতন্ত্র ছিল যা টিকটিক শব্দ করা একটি বোমার মতো যেটা যে কোনো সময় বিস্ফোরিত হতে পারে। চিলির সালভাদর আইয়্যেন্দে ও বলিভিয়ার সিলেস সাউসোর শাসনামলে জনতাবাদী নীতি ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে এনেছিল; তাহলে পেরুতে সেই নীতি কেন সফল হবে?
গার্সিয়ার নীতি ছিল বেতন বাড়িয়ে ও দ্রব্যমূল্য স্থির রেখে ভোক্তাদের ব্যয়ের পরিমাণ বাড়াতে উৎসাহিত করা—যা এক প্রকারের সাময়িক সমৃদ্ধি এনেছিল; তবে এটা কেবল ততক্ষণই স্থায়ী হত, যতক্ষণ পর্যন্ত প্রয়োজনীয় আমদানি কিনতে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ থাকত। (কারণ পেরু তার খাদ্য ও শিল্প উপাদানের একটি বড় অংশ আমদানি করে থাকে)। তবে গার্সিয়ার এই নীতিগুলো সমস্যাও তৈরি করছিল। ইতোমধ্যে দেশের রিজার্ভ প্রায় ফুরিয়ে আসছিল, এবং আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থাগুলোর কাছে সাহায্য চাওয়ার সুযোগও তখন তার ছিল না। কারণ তিনি আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল ও বিশ্ব ব্যাংকের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন এবং তাদের বেশিরভাগকেই বিরূপ করে তুলেছিলেন। অধিকন্তু তার সরকার কেবলমাত্র এর নিজস্ব দেনা মেটাতে প্রচুর পরিমাণে কাগজের টাকা ছাপছিল। ক্রমেই মুদ্রাস্ফীতি বাড়ছিল, এবং কৃত্রিমভাবে ডলারের মূল্য কম রাখা হচ্ছিল। (আসলে কোন পণ্যের 'সামাজিক প্রয়োজনীয়তা' কত তার উপর নির্ভর করে ডলারের একাধিক বিনিময় হার ছিল), যার ফলে একদিকে রপ্তানি নিরুৎসাহিত হচ্ছিল, এবং অন্যদিকে কালোবাজারি ও মুনাফাবাজি উৎসাহ পাচ্ছিল। গার্সিয়ার এই নীতিগুলো কেবলমাত্র হাতে গোনা কয়েকজনকে ধনী করছিল। এছাড়া দেশের বাকি জনগণকে ঠেলে দিচ্ছিল দারিদ্র্যের দিকে যা দিন দিন বেড়েই যাচ্ছিল।
আলান গার্সিয়া রাষ্ট্রপতি থাকাকালীন তার সাথে মাত্র একবারই আমার সাক্ষাৎকার হয়েছিল।আমি লন্ডন থেকে ফিরেছিলাম এবং গার্সিয়া আমাকে স্বাগত জানানোর জন্য তার একজন সহকারীকে পাঠিয়েছিলেন। তখনকার প্রথা অনুযায়ী আমাকে সরকারী বাসভবনে গিয়ে রাষ্ট্রপতির সৌজন্যের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাতে হতো। আলান গার্সিয়া নিজেই আমাকে গ্রহণ করেন, এবং আমাদের মধ্যে প্রায় দেড় ঘণ্টার মতো কথা হয়। তিনি আমাকে হাতে তৈরি একটি বাজুকা দেখান, যেটা সেন্দেরো লুমিনোসো – শাইনিং পাথ নামে পরিচিত মাওবাদী গেরিলা আন্দোলন তৈরি করেছিল এবং এটাকে প্রাসাদের দিকে নিক্ষেপ করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছিল।
তখন তিনি একজন তরুণ ছিলেন এবং একজন দক্ষ রাজনীতিবিদের মতোই মোহনীয় ব্যবহার করতে জানতেন। এর আগে নির্বাচনী প্রচারণার সময় এক পরিচিত বন্ধুর বাসায় ডিনারে আমি তাকে মাত্র একবারই দেখেছিলাম। তখন আমার তার সম্পর্কে যে ধারণাটি হয়েছিল তা ছিল—তিনি ক্ষমতার প্রতি আকৃষ্ট একজন মানুষ, যিনি ক্ষমতা পাবার জন্য যেকোনো কিছু করতে পারেন। সেসময় আমি টেলিভিশনে বলেছিলাম যে আমি তাকে ভোট দেব না, বরং খ্রিস্টান পপুলার পার্টির প্রার্থী লুইস বেদোইয়া রেইয়েসকে ভোট দেব। পরবর্তীতে তিনি যখন ক্ষমতায় আসেন, তখন ১৯৮৬ সালের জুন মাসে লিমার কারাগারে দাঙ্গাকারীদের হত্যাকান্ডের নিন্দা জানিয়ে আমি তাকে একটি খোলা চিঠি লিখেছিলাম । ( তিনটি কারাগারে শত শত বন্দী ছিল যারা সবাই সেন্দেরো লুমিনোসোর সদস্য ছিল এবং বিক্ষোভ ও বিদ্রোহে জড়িয়ে পড়েছিল; তারা আত্নসমর্পণ করলেও অনেককেই তাৎক্ষনিক ভাবে হত্যা করা হয়।)
তবুও, এত সবকিছুর পরেও, তার নীতির প্রকাশ্য বিরোধিতা করার পরেও, আলান গার্সিয়া আমার প্রতি কোনো বিদ্বেষ পোষণ করেননি। (এমনকি তার শাসনামলের শুরুতেই তিনি আমাকে স্পেনের রাষ্ট্রদূত হওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলেন)। মজা করে আমি তাকে বলেছিলাম যে এটা একটা দুঃখের বিষয় যে তিনি নিজেকে পেরুর সালভাদর আইয়্যেন্দে বা ফিদেল কাস্ত্রো বানাতে চাচ্ছেন, যেখানে তার পেরুর ফেলিপে গনসালেস হওয়ার একটা সুযোগ ছিল। আমাদের সাক্ষাতের সময়, অত্যন্ত বিস্তারিতভাবে, এমনকি ব্ল্যাকবোর্ডে চিত্র এঁকে দেখিয়ে, গার্সিয়া তার পরবর্তী বছরের লক্ষ্যগুলো ব্যাখ্যা করছিলেন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্যটিই তিনি উল্লেখ করেন নি। যখন পুন্তা সাল-এর সৈকতে সেই তপ্ত দিনে, প্রাচীন একটি রেডিওতে আমি গার্সিয়ার বার্ষিক সংসদীয় ভাষণ শুনছিলাম তখন আমি সেটি জানতে পারি। রেডিওতে তার কন্ঠস্বর ভেঙে ভেঙে আসছিল। তার সেই ঘোষণা ছিল দেশের সব ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানকে জাতীয়করণ করে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
আমি যখন এই ঘোষণা শুনছিলাম, তখন আমার পাশে একজন বয়স্ক মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি সুইমিং স্যুট পরেছিলেন, আর তার কৃত্রিম হাত ঢাকতে এক হাতে চামড়ার গ্লাভস ছিল। তিনি বললেন, ‘’আঠারো বছর আগে, আমি পত্রিকায় পড়েছিলাম যে জেনারেল ভেলাসকো আমার দেশের জমিদারি কেড়ে নিয়েছেন। আর এখন, এই ছোট্ট রেডিওতে শুনছি যে আলান গার্সিয়া আমার কোম্পানিটাও নিয়ে নিলেন।‘’ তারপর তিনি উঠে দাঁড়ালেন এবং সমুদ্রে ঝাঁপ দিলেন। সেদিন পুন্তা সাল-এ যারা অবকাশযাপন করছিলেন, তাদের অনেকেই এই খবরটা সহজভাবে মেনে নিতে পারেননি। তারা ছিলেন পেশাজীবী, নির্বাহী কর্মকর্তা, ও কিছু ব্যবসায়ী যাদের মধ্যে অনেকেই হুমকির মুখে পড়া সেই কোম্পানিগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কিন্তু সেই কৃত্রিম হাতওয়ালা মানুষটির মতো তারাও ব্যাপক জাতীয়করণের এই একটানা বারো বছরের স্বৈরশাসন (১৯৬৮–১৯৮০)মনে করতে পারছিলেন । সামরিক শাসনের শুরুতে মাত্র সাতটি শিল্পপ্রতিষ্ঠান জাতীয়করণ করা হয়েছিল এবং সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছিল দুইশোরও বেশিতে। সামাজিক অংশগ্রহণমূলক গণতন্ত্র -এর নামে জেনারেল হুয়ান ভেলাসকো আলবারাদো পেট্রোলিয়াম, বিদ্যুৎ, খনিশিল্প, ও চিনিশিল্প জাতীয়করণ করেছিলেন। পেরুর ক্ষমতা যখন ভেলাসকোর হাতে যায়, তখন দেশটি দরিদ্র ছিল এবং তার শাসনামলে দেশটি চরম দারিদ্র্যের দিকে ধাবিত হয়। এখন আবার সেই দুঃস্বপ্নের পুনরাবৃত্তি হল যেখানে আলান গার্সিয়ার গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্র ব্যাংক, বীমা কোম্পানি, ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো গিলে ফেলতে চলেছে।
সেদিন সন্ধ্যায় বিষন্ন এক খাবারের আয়োজনে, পাশের টেবিলের এক নারী তার দুর্ভাগ্যের কথা বলছিলেন—অনেক পেরুভিয়দের মতো, তার স্বামীও বেনেসুয়েলায় ভালো চাকরি ছেড়ে একটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নিতে লিমায় ফিরেছিলেন। এখন কী তাদেরকে আবারও পেরু ছাড়তে হবে?
পরদিন সকালে আমি ও পাত্রিসিয়া সৈকত ধরে দৌড়াচ্ছিলাম, আমাদের ওপর দিয়ে সারিবদ্ধ এক গ্যানেট পাখির ঝাঁক উড়ে যাচ্ছিল । আমি পাত্রিসিয়াকে বলছিলাম—‘’পেরু বর্বরতার দিকে আবারও এক ধাপ পিছিয়ে গেল।‘’ এই জাতীয়করণ দেশজুড়ে দারিদ্র্য, পরজীবী মনোভাব, ও ঘুষের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে দেবে। দেরি হোক বা শীঘ্রই, তবে নিশ্চিতভাবে, এইসব পদক্ষেপই ১৯৮০ সালে বারো বছরের সামরিকশাসন শেষে ফিরে পাওয়া পেরুর এই গণতান্ত্রিক সরকারকে ধবংস করে দেবে।
(মারিও বার্গাস যোসার আত্মজীবনীর অংশবিশেষ।)