গত বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তির দেহে বসানো হয় নিউরালিংকের ব্রেইন চিপ। পরের অগাস্টে আরো এক ব্যক্তির দেহে চিপ বসিয়েছে কোম্পানিটি।
Published : 14 Jan 2025, 01:40 PM
এবার তৃতীয় ব্যক্তির দেহে ব্রেইন-চিপ বসানো হয়েছে বলে জানান দিলেন নিউরালিংক প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক।
তিনি বলেছেন, নিউরালিংক আশা করছে এ বছর আরও ২০ থেকে ৩০ জনের দেহে পরীক্ষামূলকভাবে এই চিপ বসাবে কোম্পানিটি।
“নিউরালিংক ব্রেইন চিপ বসানো তিনজন মানুষ পেয়েছি আমরা… যারা সবাই ভালো ভাবে কাজ করছেন,” নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্স-এ এমনই লিখেছেন মাস্ক।
এর আগে গত বছরের জানুয়ারিতে প্রথমবারের মতো এক ব্যক্তির দেহে বসানো হয় নিউরালিংকের ব্রেইন চিপ। এর পর একই বছরের অগাস্টে আরো এক ব্যক্তির দেহে ব্রেইন চিপ বসিয়েছে কোম্পানিটি।
নিউরালিংকের লক্ষ্য হচ্ছে, ‘ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেইসেস (বিসিআই)’ নামের ডিভাইস তৈরি করা। ২০২৩ সালের শরতে মার্কিন নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘এফডিএ’-এর সবুজ সংকেত পাওয়ার পর থেকে নিজেদের প্রথম পরীক্ষা চালানোর লক্ষ্যে মানব রোগীর খোঁজ শুরু করেছিল কোম্পানিটি। সেই ধারাবাহিকতায় এখনও পর্যন্ত তিনজন ব্যক্তির দেহে এই চিপ বসালো তারা।
মাস্ক বলেছেন, প্রায় এক বছর আগে প্রথমবারের মতো কোনো ব্যক্তির দেহে ব্রেইন চিপ বসানোর পর থেকে তাদের ডিভাইসগুলোকে আরও বেশি ইলেকট্রোড, উচ্চতর ব্যান্ডউইথ ও দীর্ঘমেয়াদী ব্যাটারি আয়ু দিতে কাজ করে যাচ্ছে তার কোম্পানি।
সর্বশেষ এই রোগী সম্পর্কে কোনও বিশদ তথ্য দেননি মাস্ক। তবে আগের ব্রেইন চিপ বসানো ব্যক্তিদের আপডেটেড তথ্য তিনি দিয়েছেন বলে প্রতিবেদনে লিখেছে ব্রিটিশ দৈনিক ইন্ডিপেনডেন্ট।
ব্রেইন চিপ বসানো দ্বিতীয় রোগীর মেরুদণ্ডের আঘাত ছিল। চিপ বসানোর পর তিনি ডিভাইসের সাহায্যে ভিডিও গেইম খেলেছেন ও থ্রি-ডি অবজেক্ট তৈরি করতে কম্পিউটার ডিজাইন সফটওয়্যার কীভাবে ব্যবহার করতে হয় তা-ও শিখেছেন তিনি।
অন্যদিকে মেরুদণ্ডের আঘাতের পর কিছু সময় পক্ষাঘাতগ্রস্ত ছিলেন ব্রেইন চিপ বসানো প্রথম রোগী। তিনি বলেছেন, নিউরালিংক চিপ বসানোর ফলে ভিডিও গেইম ও দাবা খেলতে পেরেছিলেন তিনি।
নিউরালিংকের এ ধরনের অগ্রগতি খবরের শিরোনাম হলেও আরও অনেক কোম্পানি ও গবেষণা দল রয়েছে যারা একই ধরনের প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে।
গত বছর বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নিউ ইংল্যান্ড জার্নাল অফ মেডিসিন’-এ প্রকাশিত দুটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কীভাবে ‘অ্যামায়োট্রফিক ল্যাট্রাল স্ক্লেরোসিস বা এএলএস’ রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের আরও ভালোভাবে যোগাযোগ করতে সাহায্য করতে পারে ‘ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেইসেস’ বা বিসিআই।
যুক্তরাষ্ট্রের এক গবেষণার ডেটাবেইস অনুসারে, ৪৫টিরও বেশি পরীক্ষা চলছে ‘ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেইসেস’ নিয়ে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা, মস্তিষ্কের আঘাত কাটিয়ে উঠতে সহায়তা করা।
“অনেক গবেষণায় এরইমধ্যে দেখা গেছে, মানুষ বিসিআই ব্যবহার করে কম্পিউটার কার্সার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন,” বলেছেন ‘ইউনিভার্সিটি অফ ওয়াশিংটন’-এর ‘সেন্টার ফর নিউরোটেকনোলজি’র সহ-পরিচালক রাজেশ রাও।
তিনি বলেন, দুটি দিক থেকে অনন্য হতে পারে নিউরালিংক। যেখানে প্রথমবারের মতো একটি রোবটকে ব্যবহার করা হয়েছে মানব দেহে ব্রেইন চিপ অর্থাৎ মস্তিষ্কে নমনীয় ইলেকট্রোড থ্রেড বসানোর জন্য। যাতে রোগীর স্নায়বিক কার্যকলাপ রেকর্ড ও ডিভাইসের মাধ্যমে তা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। আর এসব থ্রেড অন্যান্য ইন্টারফেইসের চেয়ে বেশি নিউরন থেকে রেকর্ড করতে পারে।
তবে নিউরালিংকের পদ্ধতির বিভিন্ন সুবিধা এখনও দেখানো হয়নি এবং কিছু প্রতিযোগী অন্যান্য উপায়ে কোম্পানিকে ছাড়িয়ে গেছে বলেও জানান তিনি।