“বিষয়টা এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এটা একদিনের নোটিসে করা সম্ভব না।”
Published : 14 Jan 2025, 05:44 PM
জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্রের খসড়া নিয়ে মতামত দেওয়ার জন্য সময় নিতে চায় বিএনপি।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, “বিষয়টা এত বেশি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ যে এটা একদিনের নোটিসে করা সম্ভব না।”
বাংলাদেশের ইতিহাসের গতিপথ বদলে দেওয়া ২০২৪ সালের শেষ দিন মঙ্গলবার ‘মার্চ ফর ইউনিটি কর্মসূচি’ ঘোষণা করে জুলাই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন। শহীদ মিনারের ওই কর্মসূচি থেকেই ‘জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র’ প্রকাশের কথা ছিল।
সেই প্রস্তুতি নিয়ে সারা দেশ থেকে ছাত্র-জনতাকে শহীদ মিনারে সমবেত হওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছিল।
বলা হয়েছিল, এই ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ হবে ‘আগামীর বাংলাদেশের ঘোষণাপত্র’। ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে এর মাধ্যমে ‘নাৎসি বাহিনীর’ মত ‘অপ্রাসঙ্গিক’ ঘোষণা করা হবে। একইসঙ্গে ১৯৭২ সালের ‘মুজিববাদী’ সংবিধানের ‘কবর’ রচনা করা হবে।
ঐকমত্য গঠনের জন্য সব রাজনৈতিক দলের কাছেও পাঠানো হয় ঘোষণাপত্রের খসড়া। সেখানে বলা হয়, “আমরা নিজেদের স্বাধীন সার্বভৌম জনগণ হিসেবে ঘোষণা করলাম।”
ওই কর্মসূচি নিয়ে নানা জল্পনা কল্পনার মধ্যে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সাংবাদিকদের বলেছিলেন, এ ঘোষণাপত্রের সঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সম্পর্ক কোনো সম্পর্ক নেই।
কিন্তু কর্মসূচির আগের সন্ধ্যায় ৩০ ডিসেম্বর সরকারের পক্ষ থেকে একই ধরনের ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।
এরপর ওই দিন গভীর রাতে জরুরি বৈঠক শেষে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঘোষণা দেয়, অন্তর্বর্তী সরকার যেহেতু ঘোষণাপত্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে, তারা তাতেই সমর্থন দেবে।
এরপর ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে লাখো ছাত্র-জনতার সমাবেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির নেতারা ‘জুলাই প্রোক্লেমেশন’ ঘোষণার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে ১৫ দিন সময় ঠিক করে দেন।
তবে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম গত ৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, যেহেতু সবার সঙ্গে কথা বলতে হবে, তাই ১৫ জানুয়ারির পর কিছু সময় বাড়তে পারে। তবে খুব বেশি দেরি হবে না।
তিনি সেদিন বলেন, “অনানুষ্ঠানিকভাবে ৩১ ডিসেম্বর থেকেই অনেক দলের সঙ্গে আলোচনা করেছি। আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী সপ্তাহ থেকেই বসা শুরু করব।”
মঙ্গলবার বিএনপির সংবাদ সম্মেলনে এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে মির্জা ফখরুল বলেন, “অন্তবর্তীকালীন সরকারের একজন উপদেষ্টা মাহফুজ আলম সাহেবের কাছ থেকে ঘোষণার খসড়া পেয়েছি এবং উনি অনুরোধ করেছেন যে, এই বিষয়ে আমাদের মতামত জানানোর জন্য।
“আমরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছি, আমরা আরও আলোচনা করছি। আমাদের অন্যান্য দলগুলো আছে, তাদের সাথে আলোচনা করতে হবে। শুধু তাই নয়, সংবিধান বিশেষজ্ঞ যারা আছেন তাদের সঙ্গেও কথা বলতে হবে কারণ এই ঘোষণাপত্রের মধ্যে সংবিধানের ব্যাপারেও বহু কথা আছে, যেটি আমাদের দেখতে হয়।”
ফখরুল বলেন, “সুতরাং আমাদের ওই সময়টুকু লাগবে আর কি, আমরা চেষ্টা করছি, আলোচনা করছি এটার ওপরে।”
তিনি বলেন, ‘‘বিএনপি একটা দায়িত্বশীল দল। এর জন্মই কিন্তু সংস্কারের মধ্য দিয়ে। আমাদের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান সাহেব তিনি একদলীয় শাসন ব্যবস্থা থেকে বহুদলীয় গণতন্ত্র নিয়ে এসেছিলেন, যা সবচেয়ে বড় সংস্কার…।
“সংস্কার একটা চলমান প্রক্রিয়া, প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে বদলাতে পারে, চেইঞ্জ হতে পারে। চেইঞ্জ ছাড়া তো এগোবে না, সভ্যতা এগোবে না, রাজনীতি এগোবে না, কোনো কিছুই এগোবে না।”
‘পতিত ফ্যাসিস্টদের বিচার’
সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের উত্তরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তার দল ক্ষমতায় গেলে ‘পতিত ফ্যাসিস্টদের’বিচার করবে।
“যে ফ্যাসিজম বলছেন, এটার বড় শিকার বিএনপি। আমাদের ওপরে যে নিপীড়ন-নির্যাতন-গুম হয়েছে এটা আর কার ওপরে হয়েছে? এমকি অন্য দলগুলোর মধ্যে… আমরা এবং জামায়াতে ইসলামী সবচেয়ে বেশি অ্যাফেক্টেড হয়েছি। আমাদের ওপরে অত্যাচারটা তো সবচেয়ে বেশি হয়েছে।”
ফখরুল বলেন, “আমরা ফ্যাসিস্টদের বিচার করব না তো কে বিচার করবে? আমরা যদি ক্ষমতায় আসি। আর যেটা (বিচার) শুরু হয়েছে, এখান থেকে সরে যাওয়ার কারো কোনো উপায় নেই। অবশ্যই বিচার হবে। আবার বিচারে তড়িঘড়িও করা যাবে না। তড়িঘড়ি করলে কিন্তু এই বিচার প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাবে। বিচার একটা প্রক্রিয়া, এটা চলবে। অবশ্যই আমরা সেই বিচার শেষ করব, এই ব্যাপারে কোনো সন্দেহ নাই।”
নির্বাচন প্রশ্নে ‘দ্বিমত নেই’
আরেক প্রশ্নের উত্তরে মির্জা ফখরুল বলেন, নির্বাচন নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে কোনো দ্বিমত তিনি দেখছেন না।
“প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলের একটা স্বকীয়তা আছে, তাদের চিন্তাভাবনা আছে। আমরা মনে করি, এই এই কারণে নির্বাচন দ্রুত করা সম্ভব, অসম্ভব কিছু না। জামায়াতে ইসলামী তাদের নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছেন, আমরা আমাদের দৃষ্টিভঙ্গিতে বলেছি।”
যুগপৎ আন্দোলনে থাকা সব দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করার কথা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তারা প্রত্যেকে বলেছেন, নির্বাচন দ্রুত হওয়া দরকার। এই ব্যাপারে আমাদের মধ্যে কারো দ্বিমত নেই। সমমনা দল, বাম দল, ডান দল, যতগুলো আছে, সবাই ইতোমধ্যে…।
“আপনারা দেখেছেন যে, সিপিবি দ্রুত নির্বাচনের ব্যাপারে স্টেটমেন্ট দিয়েছে। আর জামায়াতে ইসলামীর যে নির্বাচনের ব্যাপারে খুব বেশি পার্থক্য আছে, তেমন দেখি না। কয়েকদিন আগেও উনি (জামায়াত আমির শফিকুর রহমান) বললেন, নির্বাচন করা দরকার, আগে জাতীয় সংসদ নির্বাচন করা দরকার। তাই পার্থক্য দেখছি না।”
অন্যদের মধ্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।