ভারতের উদার অর্থনীতির ‘স্থপতি’ হিসেবে পরিচিত মনমোহন সিং ২০০৪ থেকে ২০১৪ পর্যন্ত দুই মেয়াদে দেশটির প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
Published : 28 Dec 2024, 05:34 PM
ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিংয়ের শেষকৃত্য শনিবার রাজধানী নয়া দিল্লির নিগমবোধ ঘাট শশ্মানে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে।
এ সময় ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, ভুটানের প্রধানমন্ত্রী শেরিং তোবগে, ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, বিরোধীদল কংগ্রেসের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে, সোনিয়া গান্ধী এবং রাহুল গান্ধীসহ অনেক রাজনীতিবিদ এই অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় উপস্থিত ছিলেন।
পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী, মনমোহন সিংয়ের মরদেহ প্রথমে নয়া দিল্লিতে কংগ্রেসের কেন্দ্রীয় কার্যালায়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানেই সাধারণ মানুষ ভারতের প্রয়াত এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে শেষ শ্রদ্ধা জানান।
ড. সিংয়ের মৃত্যুতে শ্রদ্ধা জানাতে দেশজুড়ে সাত দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার। এই সময়টিতে ভারতজুড়ে দেশটির জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যম।
ভারতের কংগ্রেস দলীয় এই সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যুতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উদযাপনসহ দলের সমস্ত আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি আগামী সাত দিনের জন্য স্থগিত করেছে কংগ্রেস।
এর আগে, শুক্রবার মনমোহন সিংয়ের স্মৃতিসৌধের জন্য জায়গা বরাদ্দ নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার ও কংগ্রেসের মধ্যে বিতর্ক শুরু হয়। কংগ্রেস চেয়েছিল, মনমোহনের সম্মানে যেখানে তার স্মৃতিসৌধ গড়ে তোলা হবে সেখানেই তার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু তার বদলে অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার জন্য নিগমবোধ ঘাট বরাদ্দ দেওয়ায় এর নিন্দা করেছে কংগ্রেস।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে শুক্রবার এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে কথা বলেছিলেন।
পরে এক বিবৃতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, “মনমোহন সিংয়ের স্মৃতিসৌধের জন্য একটি জায়গা বরাদ্দ করা হবে। কিন্তু সেই প্রক্রিয়ায় কিছুটা সময় লাগবে। তার আগে শেষকৃত্য এবং অন্যান্য আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন হোক। কারণ, এ ব্যাপারে একটি ট্রাস্ট তৈরি করা দরকার। সেই ট্রাস্টকে জায়গা বরাদ্দ করবে কেন্দ্র।”
এদিকে, ভারতের সাবেক রাষ্ট্রপতি প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের মেয়ে মনমোহন সিংয়ের জন্য স্মৃতিসৌধের জায়গা বরাদ্দের দাবি করায় খাড়গের সমালোচনা করেছেন। সামাজিক মাধ্যম এক্স-এ পোস্ট করা বিবৃতিতে তিনি অভিযোগ করেন, ২০২০ সালের আগস্টে যখন তার বাবার মৃত্যু হয় তখন কংগ্রেস একটি শোক সভাও ডাকেননি। কংগ্রেসের একজন প্রবীণ নেতা তাকে বলেছিলেন, ভারতের প্রয়াত রাষ্ট্রপতিদের জন্য স্মৃতিসৌধ করা হয় না।
মনমোহন সিং ৯২ বছর বয়সে বার্ধক্যজনিত নানা শারীরিক জটিলতায় বৃহস্পতিবার রাতে মারা যান। গত কয়েক মাস ধরেই তার শরীর খারাপ যাচ্ছিল। 'ভারতের অর্থনৈতিক সংস্কারের স্থপতি' হিসাবে পরিচিত মনমোহন ২০০৪ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স সরকারের দুই মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী ছিলেন।
তার মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ, মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিম, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনসহ বিশ্বের অনেক বিশ্ব নেতা।
আরও পড়ুন:
কীর্তিমানের মৃত্যু নেই: মনমোহন সিংকে বিশ্ব নেতাদের শ্রদ্ধা
মনমোহনের জীবনের বাঁক বদলে যায় যে ফোন কলে
'মনমোহন সিংয়ের স্মৃতিসৌধর জায়গা দেওয়া হবে', বিতর্কের মুখে জানাল