আমাদের বাংলা ব্যাকরণে সমাস থাকে। চুপচাপ ছয়টি সমাস ছয়টি রিপুর মতো বসবাস করে।
Published : 14 Jan 2025, 07:36 PM
সুবিধাবাদ
সুবিধামতো আমি ঈদের সেমাই
আর গোস্ত দিয়ে দাঁতের বারোটা বাজাই
জুম্মার জায়নামাজে তুলি
শিবাজ রিগ্যাল-রাতের গোপন ঢেকুর
কাঁটা চামচের ফাঁক-ফোকরে খুঁজি লবস্টারের খোসা ছাড়ানো বুক
বিপ্লবের নামে পেটাই
পুরনো এক ছত্র চর্বিত মায়াকোভস্কি
সুবিধা মতো হিঁদুর ছেলের খাৎনা-কাহিনিতে এক হাত নিই
টুপি ও দাড়ির বিরুদ্ধে এই আমিই হয়ে উঠি ধোঁয়া তোলা গণ-স্লোগান
বিদেশি বিনিয়োগ শুনলেই শুয়ে পড়ি
হয়ে যাই বিদগ্ধ শুয়োরের বাচ্চা
নামজাদা রানির কাঁধে
মাথা রেখে পাতলা শোকে ঘুমাই,
রানি গোলাপ হয়ে ফুটতে চলে যাই বাজারের এলোকেশী দরে
ঘুরতে ঘুরতে চলে যাই দুবাই
কিংবা হজের ফ্লাইটে চড়ে
ভরি ভরি সোনার দর হাঁকাই
ফ্লাইট কনফার্ম করে
ক্যালিফোর্নিয়া টু কলকাতা
মেকাপের পারদে নাক মুখ ও ঠোঁটের নকশা গজাই—
বহুতর কবুতর সুখে
যাহাকে বলে ঘোরতর হালাল বাণিজ্য
নতুবা
হালাল নামের চিকিৎসা করাই গুদাম মার্কা শরীরের ভেতর
লালন শুনলেই আবার
হৃদয়ে কেঁপে ওঠে
চালতে স্বাদের চৈতন্য
আধমরা ছাগলের দাঁতে
কাঁঠাল পাতার রস যেমন
ক্রিপ্টোগ্রাফি করে রেখে দেয়
জানি না কবে থেকে
আমি সেই নাম বয়ে চলেছি
অথচ এইখানে আজ
রাজপথের রকমারি ভাষণে
কব্জা করে ফেলেছি সেই মগজ কাটা দাঁত:
এখানে যাকে বলে সক্রেটিস ও রাসেল
কবজি ডুবিয়ে খাই
ঢাকাই নেহারি,
তেহারি
আর
বেল্ট ভরা কচকচে নোটে পুষি
বিশ্ব মাপের অবিনাশী বিশ্বাস
তখনও ছিলাম আমি
আকবরের ধূর্ত বহুগামী প্রণয়ে
আমিই তো সেই মিহির
যে ধান কাটার গান থেকে
কেটে নিয়েছিল রমণীর জিওভা
খেটে খাওয়া মজুরের গানকে
যে রাতদিন টাট্টিখানায় গিয়ে শৌচ করে রেখে আসে—সে তো আমিই
আবার রঙ-বেরঙের
হাত কচলাতে থাকি
পুঁজির জাদুকরি প্রদীপ পর্যন্ত
সাজিয়ে রাখি তা সিঁথেনে আবার,
সাথে অবিশ্বাস বাঁধা থাকে
কানের বাতাসে
চোখের বারমাসি কালো চশমাটা
নামিয়ে রেখে চুমু খাই
রাশান সুন্দরীর বারুদি-বিম্বাধরে
বাল কামাতে গিয়ে দৈবাৎ দেখি
বাঁশের চাঁছিটা কবে যেন
জিলেটের খাপছাড়া তলোয়ার হয়ে গেছে!
ব্যাকরণে অকারণ ভয়
আমাদের বাংলা ব্যাকরণে সমাস থাকে। চুপচাপ ছয়টি সমাস ছয়টি রিপুর মতো বসবাস করে। কখনো এ ওর সাথে ঝগড়া করে, আবার একসাথে মিলে যায়। কখনো একজনের জয় হয়, অপরজন নিজের পরাজয় উপভোগ করে। মাঝে মাঝে বহুব্রীহি কিছু ঝামেলা বাধায়। বিভ্রান্ত করে দ্বিগুর কিছু সংখ্যাকে। তা সত্ত্বেও বহুব্রীহি বহুপদী অর্থনীতি করে। গোপন আধিপত্যের মীমাংসা ধরে রেখেই মিলে যায়। আবার ঘোড়ার ডিমটাকে নিজের মধ্যে পরম যত্নে ফাটায়। ভেজে না খেয়ে সুবিধা বুঝে ফট করে তৎপুরুষের ষষ্ঠ বৌয়ের ঘরে রেখে দিয়ে চলে আসে; সবার অজান্তে, অলক্ষ্যে।
আপনি কি বাংলাদেশের কালচারাল পলিটিক্স দেখতে চান?
নীলক্ষেতের ফুটপাত থেকে একটা পুরনো হায়াত মামুদের ‘ভাষা শিক্ষা’ কিনে নিয়ে সমাসের পর্দা ওঠান।
কনকর্ডের বইয়ের দোকান পর্যন্ত আর হাঁটা লাগবে না।
বড়োলোক্স
ওসব দুঃখের আলাপ ছাড়ো,
ওসব আমাদের ঘরে অনেক আছে।
একটু বড়োলোকি চেকনাইয়ের গল্প বলো।
আমরা বড়োলোকি গল্প পছন্দ করি।
ব্রায়োলিটি ডায়মন্ড নেকলেসের খবর বলো,
এ বছর কে কে কিনেছে সেটা?
রোলস রয়েসের নতুন মডেলে কে চড়লো প্রথম?
দ্যা ডাচেস অব ক্যাম্ব্রিজ ২০১১ সালে ২ কোটি ৬১ লাখ ৫৮ হাজার টাকারও বেশি দামের যে গাউনটা পরেছিলেন, সেটা কি নিলামে উঠবে
নাকি অমনিই থাকবে?
কসমেটিক্সের দাম বাড়লো না কমলো?
সোনার দামটা?
আর কিচেনের গল্পগুলো বলো।
কী কী খায় ওরা? কফিটা কি ভিয়েতনামের নাকি সরাসরি ব্রাজিল থেকে আসে?
ওসব দুঃখের কথা, নেতিবাচকতা ছেড়ে ভালো ভালো কথা বলো শুধু! যা কিছু ভালো, তার গল্প বলো তুমি।
ওসব জ্ঞানের কথা বাদ দিয়ে একটু সেক্সের আলাপ করো দেখি। জ্ঞান আমাদের ঘরে প্রচুর আছে।
তারচেয়ে বলো, ঐশ্বরিয়াকে দিয়ে কি এখনও পুষছে অভিষেকের? শাহরুখ খান কি এখনও পারে টারে?
জোলির কী অবস্থা? সারা আলী খান কিন্তু জোশ! জান ইয়ামান তার গার্লফ্রেন্ডকে ২৫৩ কোটি টাকা দিয়ে গাড়িটা না কিনে দিলেও পারতো!
এক রাতের জন্য এতো খরচ পোষে?
আমাদের দুঃখ আর ‘না’ ভোলাতে বড়োলোকের আলাপ করো।
প্রেম আর জ্ঞান বাদ দিয়ে
বড়োলোক আর সেলিব্রিটিদের সেক্সলাইফের গল্প বলো।
ওসব দুঃখ আর জ্ঞান আমাদের ঘরে প্রচুর আছে। আমাদের মেরুদণ্ডের গোড়া থেকে জ্ঞান আর দুঃখের শেকড় গজিয়ে গেছে।
সেখানে বিরাট একটা গাছ জন্মেছে। গাছ থেকে আমরা দুঃখ আর জ্ঞান পেড়ে ওজনে কম দিয়ে বেশি দামে বিক্রি করি।
ওটাই আমাদের জীবিকা। আর গাছের গায়ে মান্দারের মতো কিছু কাঁটা হিংসার ব্লিচ দিতে থাকে।
ওসব কুটনামির কথা রাখো,
ওসব ঢের আছে আমাদের ঘরে।
তুমি বরং আন্ডারওয়ার্ল্ডের কথা বলো।
কোন মাদকের আয় বেশি আজকাল?